ঈদ বা ঈদের ছুটি এখন আর আগের মতো
ভালো লাগে না রুদ্রের কাছে।
ছোটবেলায় যে আনন্দটা হতো এখন আর
নেই সেটা। ছোটবেলার দিনগুলো খুব
মিস করে সে। তাই সে ঠিক করলো দূরে
কোথাও গিয়ে বেড়িয়ে আসবে।
উদ্দেশ্য সিলেট। হাতে আছে ৪,০০০
টাকা। আরও টাকা লাগবে তাই সে
তার খুব কাছের মানুষকে ফোন করে।
কাছের মানুষটি আর অন্য কেউ নয়। তার
আংকেল। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর
তার এই আংকেল তাকে মানুষ করে বড়
করে তোলে। মা-বাবার দায়িত্ব
পালন করে চলেছে। ফোন করল তার
আংকেলকে-
রুদ্রঃ আমার কিছু টাকা লাগবে।
বেড়াতে যাবো।
আংকেলঃ কোথায় যাবি?
রুদ্রঃ সিলেট। ৪,০০০ টাকা আছে। আরও
লাগবে। দিতে পারবেন?
আংকেলঃ তোকে আমি কোনোদিন
মানা করেছি? দিতে পারবেন কিনা?
এভাবে বলছিস কেন? যা লাগবে
নিয়ে যাবি। বেশী লাগলে বেশী
নিবি।
রুদ্রঃ ১০,০০০ টাকা হলে চলবে। আমার
কাছে ৪,০০০ আছে।
আংকেলঃ বুঝলাম। আমি তোর
একাউন্টে দিয়ে দিচ্ছি। তুলে নিস।
সাবধানে যাস। আর টাকা লাগলে
ফোন করিস।
রুদ্রঃ আচ্ছা। বাই।
...
...
...
পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ল
রুদ্র। সৌদিয়া কাউন্টারে গিয়ে
সিলেটের টিকিট করল। ৯:৩০ টায় বাস।
এত পথ জার্নি করবে, কিছু খাবার
নিয়ে নিল সে।
এরি মধ্যে বাস এসে গেছে। সে উঠে
বসল। যাত্রী যারা ছিলো তারা ও
বসল যে যার জায়গায়। কিন্তু রুদ্রের
পাশের সিটটা খালি। বাস চলতে শুরু
করল। কিছুক্ষণেরর মধ্যে রুদ্র ঘুমিয়ে পড়ল।
প্রায় ১ ঘণ্টা পর তার ঘুম ভাঙ্গল। দেখে
পাশে একটা মেয়ে। এতটা গ্রাহ্য করে
খেয়াল করে নি সে। আবার ও ঘুমিয়ে
পড়ল।
..
..
..
একটু পর ওর মনে হলো ওর চোখে চশমাটা
নেই। কেমন যেন হালকা আর খালি
খালি লাগছে। চোখ মেলে দেখে
মেয়েটি ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে
আছে। চোখের পলক ফেলছে না। রুদ্র
অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে, এ যে
ইতি। রুদ্রের ইতি।
রুদ্রঃ ইতি তুমি? এই বাসে?
ইতিঃ মামার বাসায় যাচ্ছি। তুমি?
রুদ্রঃ সুখ খুঁজতে যাচ্ছি। সিলেটে।
ইতিঃ ঘুমানোর সময় চশমাটা খুলো না,
বাচ্চাদের মতো ঘুমাও। আগের মতই
আছো দেখছি। কোনো পরিবর্তন হয়নি
তোমার।
রুদ্রঃ তোমার ও তো কোনো পরিবর্তন
হয়নি। শুধু একটু মোটা হয়ে গেছো।
গালদুটো ফুলেছে।
ইতিঃ (মুচকি হেসে দিলো)
রুদ্রঃ হাসছো যে?
ইতিঃ তোমার কথা শুনে আর কি?
রুদ্রঃ তোমার হাসবেন্ড কোথায়? একা
যাচ্ছো যে?
ইতিঃ ও তো বাইরে থাকে। আব্বুর ও
শরীর খারাপ। তাই একা যাচ্ছি।
কাউকে নিয়ে আসলে পারতাম। কিন্তু
ইচ্ছে করে আনিনি। এখন তো একা
নিজের মত করে যেতে পারবো যখন
ইচ্ছা। কোনো তাড়াহুড়ো নেই।
রুদ্রঃ এটাতো আমার স্বভাব।
ইতিঃ হুম। বাস্তবতা আমাদেরকে এক
হতে দেয়নি। তাইতো তোমার সবকিছু
আপন করে নিয়ে বেঁচে আছি। তোমার
যা ভালো লাগা তাতে তোমাকে
খুঁজে পাই। তবে তুমি আমাকে কিছু
দায়িত্ব দিয়েছিলে। আমি সবকিছু
যতটুকু সম্ভব পালন করি। কখনো নিজের
পরিবারকে আমি কিচ্ছু বুঝতে দিইনি।
সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।
রুদ্রঃ হুম। বিয়ের আগে তো সবাই
ভালোবাসে। কোনো কোনো সম্পর্ক
এক ও হয়। কিন্তু আমরা পারি নি।
অনুভবেই ভালোবেসে যাবো আমরা
একে-অপরকে দূর থেকে।
ইতিঃ তোমার সাথে আর দেখা হবে
ভাবি নি। তাও হয়ে গেলো।
রুদ্রঃ পৃথিবীটা এতটা বড় নয়। কোনো
না কোনো সময় দেখা হবেই।
..
..
..
কথা বলতে বলতে ওরা সিলেট চলে
আসল। নেমে গিয়ে এক সাথে চা ও
খেলো। এবার বিদায় নেওয়ার পালা।
ইতিঃ ভালো থেকো।
রুদ্রঃ তুমি ও।
দুজন দুদিকে চলে যেতে লাগলো।
..
..
..
রুদ্র ভাবছে, কখনো দেখা হবে ভাবি
নি। তাও হয়ে গেলো। দেখা না
হওয়াটা বোধহয় ভালো ছিলো। পুরনো
ব্যাথাটা আবার বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে ইতির ও একি অবস্থা। চোখ
দুটো ভিজে গেছে ইতির। সামনের
সবকিছু অস্পষ্ট লাগছে।
..
..
..
বাস্তবতা কখনো কখনো খুব নিষ্ঠুর হয়।
কেড়ে নেয় মনের মানুষটিকে, সুখকে,
ইচ্ছাকে। অনিচ্ছা স্বত্ত্বে ও গলা
টিপে মারতে হয় ভালোবাসাকে যখন
ভাগ্য হাত ছেড়ে দেয়।
Friday, 16 September 2016
অসমাপ্ত ভালোবাসা।
Labels:
Love Story
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment