Friday, 16 September 2016

অতঃপর শুধুই আমাদের গল্প


রাহাত আজ আমার অফিসে
এসেছিলো। তানি যদি রাজি থাকে
তাহলে ও নাকি আবার তানিকে
নিতে চায় সব মিটামাট করে। এও বলে
গেল যদি তানি চায় তবে তিথীকেও
ও মেয়ে বলে মনে নিবে। অনেক কিছু
বলে আমায় শাসিয়ে গেলে যে
তানিকে ও আবার পেতে চায়। আমার
মাথা কিছুতেই কাজ করছে না। আজ
যদি আবার তানিকে নিবে তবে কেন
রাহাত বিয়ের ১২ দিন পরে তানিকে
ছেড়ে পালিয়েছিলো??
.
আমি রাহাত আর তানি সেম
ইউনিভারসিটিতে সেম ইয়ারে
পড়তাম। আমরা তিনজন অনেক ভালো
বন্ধু ছিলাম। কিন্তু তানি আর
রাহাতের সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বের
চেয়ে অনেক খানি বেশিই। ওরা একে
ওপরকে খুব ভালো বাসতো। ওদের জুটি
ছিলো ক্যাম্পাসের ঈর্ষা জাগানো
জুটি। এদিকে আমিও তানিকে
অনেকখানি ভালোবাসতাম। কিন্তু
বলতে পারি নি কারণ ওতো রাহাতকে
ভালোবাসতো।
ওদের সম্পর্কটা ওদের দুজনেরই পরিবারই
জানতো। তাই ফাইনাল ইয়ারের শেষ
হওয়ার কয়েকমাস পর ওদের দু পরিবারের
সম্মতিতে ওদের বিয়ে দিয়ে দেয়।
আমার দুর্ভাগ্য নিজেই সব কিছু করতে
হয়েছিলো ওদের বিয়ের। তারপরও
এতটুকুও কষ্ট পাই নি কারণ তানি তো
সুখে থাকবে এটা ভেবে।
ওদের বিয়ের ১২ দিন পর সকালে ফোন
আসে আমার ফোনে তানিদের বাসা
থেকে যে তানি নাকি সুইসাইড করতে
চেয়েছিলো গত রাতে!!!
এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে!!
আবাক এবং অনেক টেনশন নিয়ে চলে
গেলাম হাসপাতালে। গিয়ে যা
শুনলাম তানির মায়ের নিকট হতে
তাতে রাহাত নামের জানোয়ারটার
উপর অনেক রাগ হচ্ছিলো।
ও নাকি কাউকে কিছু না বলেই স্কলার
সিপে কানাডা চলে গিয়েছে
তানিকে ডির্ভোস দিয়ে!!
জানোয়ার টা না অনেক
ভালোবাসতো তানিকে,?
স্বার্থের কাছে সব শেষ করে দিলো !
ওকে পেলে আমি মনে হয় তখনই খুন
করতাম।
আর তানির অবস্থাটা না হয় আর নাই
বর্ণনা করলাম।
ওর জ্ঞান ফিরা মাত্র আমি ওর কাছে
গেলাম। মেয়েটা আমায় দেখে
নিরবে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছিলো। না এই
চোখে তখন অশ্রু একদমি আমি দেখতে
চাইতাম না। সময় এসেছিলো একটা
অসহায় ভালোবাসাকে সহায় দেওয়ার
তাই সময় না নিয়ে ওর একহাত মুঠির
মধ্যে নিয়ে আরেক হাত ওর মাথায়
বুলিয়ে বলেই ফেললাম
পাগলি তুই আমায় বিয়ে করবি!!!!!!!!
ও কিছু না বলে কান্নার পরিমাণটা
আরো বাড়িয়ে দিলো। হয়তো এবার
অনেক ভরসা পেয়েছে সব হারিয়ে।
অনেক কাঁদছিলো মেয়েটা সেদিন।
আমিও ওকে বলে দিলাম আজ যতটুকু
কাঁদার কেঁদে নাও কারণ এরপর আর
কাঁদতে দিবো না। হুম এর পর ৩ টা বছর
পেরিয়ে গেছে আমি আমার কথা
রেখেছি ওর চোখে আর এক ফোঁটাও
অশ্রু ঝরতে দেই নি। যদিও তানি আমার
সাথে সহজ হতে একটু সময় নিয়েছিলো।
কিন্তু পরে সব ভুলে আমায় এতটাই
ভালোবাসছে যে আমার জীবনটাই
স্বার্থক মনে হচ্ছে। এখন অনেক সুখে
আছি আমরা আমাদের তিথীকে
নিয়ে। তিথী আমাদের মেয়ে ওর বয়স ২
বছর। তিথীকে নিয়েই আমরা দুজন
আমাদের স্বপ্নের পৃথীবি রাঙ্গাচ্ছি।
কিন্তু হঠাৎ করেই রাহাত নামের
দুঃস্বপ্নের আগমন।
.
এগুলো অতিত ভাবতে ভাবতেই অফিস
থেকে বাড়ি ফিরলাম। অনেক
দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে তানি যদি
রাহাতের কথা জানে তবে কি ওচলে
যাবে আমায় ছেড়ে??
তিথীকেও কি নিয়ে যাবে সঙ্গে
করে??
আমার আর ভাবতেই ভয় হচ্ছিলো।
এগুলো প্রশ্ন নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
তানির মুখের দিকে চাইতেই ভয়
হচ্ছিলো! ওকি সব জেনে গেছে। একটু
পর বুঝলাম না ও এখনো কিছু জানে নি।
আর জানতেই বা কতক্ষণ। আগামিকাল
হয়তো সব জেনে যাবে তারপর চলে
যাবে। সারা রাত ঘুমাতে পারি নাই।
অনেক জোরে জড়িয়ে থাকলাম ওদের
মা মেয়েকে। হারানোর একটা ভয়
ছিলো আমার।
.
কখন যে ঘুমায় গেছি বলতে পারবো না।
তবে ঘুম ভাঙ্গলো তিথী মণির চেঁচা
মেচিতে। উঠে দেখি ৮ টা বেজে
গেছে। তানিও রুমে নেই। তাই তিথী
কে বললাম মামাই কোথায়??(তিথী ওর
মাকে মামাই আর আমায় বাবাই বলে
ডাকে)!!!!!
ও বললো বাবাই ঐ যে টেবিলকে
দিকে তাকিয়ে বললো এই কথা।
বিছানা থেকে উঠে টেবিলে গিয়ে
দেখলাম একটা চিঠি।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না
তানি সাথে মনে হয় রাহাতের
যোগাযোগ হইছে। আর ও ওর পুরোন
ঠিকানায় পাড়ি দিয়েছে।
তাইবলে মেয়েটা আমাদের ৩ বছেরর
সম্পর্ক আর তিথীকেও ভুলে গেল??
চিঠিটা খুলতে ইচ্ছা করছিলো না তবুও
খুললাম লেখা আছে -
মামুন তুমি তিথীকে দেখে রাখ।
রাহাত দেশে এসেছে আমায় বলো নি
কেন? আমি যাচ্ছি পুরনো হিসাব
মেটাতে।"
আমার আর ভাবতে ভালো লাগছিলো
না। শুধু এতটুকুই মনে হচ্ছিলো মেয়েটা
সব ভুলে গেল???
.
এর পর বিছানায় গিয়ে বসলাম। তিথীর
মুখের দিকে চাইলাম দেখি মেয়েটা
শান্তভাবে চেয়ে আছে। তারপর
তিথী বললো বাবাই মামাই ?
প্রশ্নটা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি
ঝরতে লাগলো। (দেখি আমার মা টাও
কাঁদছে! তানি বা আমায় কাঁদতে
দেখলেই তিথীও কেঁদে দেয় আর ওর
কান্না তানি ছাড়া কেউই থামাইতে
পারে না।)
তাই আমি ওকে থামানোর জন্য বললাম
"মা মণি তোমার আম্মু একটু পরেই চলে
আসবে আর তুমি কিছু খাবা??
তিথী মণি বললো - হুম ক্ষুধা!
তাই আমি আর দেরি না করে ওকে
টিভিতে কার্টুন দেখতে বসিয়ে
রান্না ঘরে গেলাম ডিম ভাজতে।
টিভি রুম থেকে তিথীর জোরে
জোরে হাসির আওয়াজ আসছিলো টম
এন্ড জেরি দেখছে আমার মেয়েটা আর
এই কার্টুন দেখে ও এতো মজা পায় যে
জোরে জোরে চেঁচামেচি করে আর
হাসে!!!
আর এদিকে আমি ১০টা ডিম ভাঙ্গলাম
কিন্তু একটাও ভাজতে পারলাম না!!!!!
অবশেষে একটা ডিম কোন রকম ভেজে
তিথীর কাছে আসলাম খাওয়াতে।
এসে দেখি মেয়েটা লাফালাফি
করে রুমটা খারাপ করে ফেলছে।
তারপর টিভি অফ করে যেই খাওয়াতে
যাবো ওমনি কলিং বেল বাজলো। এই
সময়ে কে আসলো ভেবে দরজা খুলে
দিয়ে আবাক হলাম দেখি তানি
রাগি লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে!!!!!
ভাবলাম অবাক হওয়ার কি আছে কিছু
হয়তো ফেলে গেছে তাই নিতে
আসছে।
আমায় সরতে বলার পরও যখন দেখলো
ভেবলার মতো দাড়িয়ে আছি তখন ও
ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে আগে
তিথীকে কোলে নিলো। তিথীর
কিসেই আনন্দ!! মনে হয় মামাই ই সব।
বাবাই যে কি কষ্ট করে ডিম ভাজি
করে খাওয়াচ্ছে তার কোন দামই নেই??
ডিম ভাজা আর রুমের অবস্থা দেখে
তানি আমায় ঝাড়তে শুরু করলো এই বলে
যে -খুব তো বড় বড় কথা বলো আর এখন
দুঘন্টার জন্য তিথীকে সামলাতে
পারো না?? বলতে বলতে তিথীকে
নিয়ে রান্না ঘরে গেল ওকে
খাওয়াতে। আমি আর কথা না
বাড়িয়ে রুমে চলে গেলাম।
.
আধা ঘন্টা পর ঘর গুছিয়ে তিথীকে
খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রুমে এসে রুম
আটাকিয়ে দিতেই আমি ঝগড়ার
পূর্বাভাস পেলাম তাই অন্যদিক হয়ে
ঘুমানোর চেষ্টা করতেই তানি
চেঁচিয়ে আমায় উঠতে বললো।
কি আর করা উঠলাম। উঠতেই তানি
বলতে শুরু করলো -
তানি - রাহাত এসেছে আমায় বলো
নি কেন??
আমি -...............!
তানি - কি হলো উত্তর দাও? রাহাত
তোমার অফিসে গিয়ে তোমায় কথা
শুনাতো আর তুমি সেগুলো বসে বসে
শুনতে??
আমি - কি করতাম আমি??
তানি - জানোয়ারটার গালে তখনই
কষিয়ে চড় দিতে পারলে না!
আমি - তুমি চলে আসলে যে??!!!!
তানি -!!!!!!!! তুমি আমায় এই চিনলে??!
গিয়েছিলাম জানোয়ারটার গালে
চটি মারতে!!!!(মনে মনে খুশিই হলাম
আমার কাজটা ওই করছে এটা ভেবে)
আমি - আমায় ছেড়ে আর তিথী মণিকে
ছেড়ে কখনো যাবে না কথা দাও?!!!
তানি কথাটা শুনা মাত্র আমার বুকের
মাঝে ঝাঁপ মেরে এসে পড়লো! আর
কিল মারতে থাকলো। আমিও কষে
জরিয়ে ধরলাম পাগলিটাকে। কখনো
হারিয়ে যেতে দিবো না।
আর মনে মনে বলতে লাগলাম তিথী
মণি এসে দেখে যাও তোমার মামাইও
কাঁদছে তোমার মতো আর এই কান্না
কেবল মাত্র তোমার বাবাই ই
থামাতে পারে এই পৃথীবিতে!

No comments:

Post a Comment