Friday, 16 September 2016

না বলা ভালবাসা

-এই নীলা শুনছো?
-হ্যা বলো।
-তোমাকে গতকাল যে নোটগুলোর কথা
বলেছিলাম সেটা
এনেছো?
-ও হ্যা।এনেছি।
(নীলা নোটস দিতে দিতে বললো)
সরি আমার খেয়াল ছিলোনা।
-ইটস ওকে।আর থ্যাংকস কষ্ট করে নিয়ে
আসার জন্য।

-থ্যাংকস এর দরকার কিসের?ফ্রেন্ড
তো ফ্রেন্ডের জন্য
এটুকু করতেই পারে।তাইনা?
-হুমম।আচ্ছা আমার এখন একটু তাড়া আছে।
পরে কথা হবে।বায়।
-ওকে।
কথা হচ্ছিলো নীলা এবং আবিরের
সাথে।
ওরা দুজন ক্লাসমেট ।
.
নীলা ও আবির ক্লাসের প্রথম সারির
স্টুডেন্টদের ভিতর দুজন।
নীলা ও আবির দুজনে গ্রুপমেট।সেই
হিসেবে ওরা অনেকটা পরিচিত।
তাছাড়া সবসময় নীলা আবিরকে
সহায়তা করে পড়ালেখার ব্যাপারে।
আর আবিরও নীলার যেকোনো সমস্যা
হলে তা সমাধানের চেষ্টা করে।
.
.
নীলা চলে যাবার সময় ওর গ্রুপমেট
আনিকা ওকে ডাক দেয়।
-এই নীলা শুনে যা। (আনিকা)
-হ্যা কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।
বাসায় যেতে হবে। (নীলা)
-এতো তাড়া কিসের তোর!লেখাপড়া
ছাড়া কি কিছুই বুঝিস না নাকি?
(আনিকা)
-আরে সেটা না তো।বাসায় গিয়ে
রান্না করতে হবে।তাছাড়া
সকালে তেমন কিছু খাইনি। (নীলা)
-আহারে,বেচারী।আবিরদের বাসায়
গিয়ে থাকলেই পারিস।ভার্সিটি
থেকে ওদের বাসাও কাছাকাছি।
(আনিকা)
-আমার এতো সামর্থ্য নেই যে ওদের
এতোবড় বাসার একটা
রুম ভাড়া নিতে পারবো।বাবা বাড়ি
থেকে যে টাকা পাঠায় তার ভিতর
আমাকে চলতে হবে আপাতত।যেভাবে
আছি ভালোই আছি।
বেশি শান্তিতে থাকলে সমস্যা
বাড়তে পারে। (নীলা)
-সেইজন্যই বললাম আবীরদের বাসায়
থাক।ফ্রিতে খেতে ও থাকতে পারবি।
আবীরের মা বাবাও খুব ভালো।
তোকে মাথায়
করে রাখবে।তোর শুধু পড়ালেখা
চালালেই হবে। (আনিকা)
-কি যে বলিস!দেখ আমরা গরীব হতে
পারি কিন্তু ভিখারি নই যে অন্যের
থেকে এভাবে সুযোগ নিবো। (নীলা)
-আহহা,রেগে যাচ্ছিস কেনো!দেখ তুই
আর আবীর যে
যতোই ভাব নিয়ে থাকিস না
কেনো,আমি কিন্তু খুব ভালোভাবেই
বুঝি তোদের দুজনার মনের ভিতর কি
চলছে।
-ধ্যাত।তোর সাথে দাড়িয়ে কথা
বলাই আমার ভুল হয়েছে।
এই বলে নীলা সেখান থেকে চলে
গেলো।
----------------------
নীলা ও আবীরের ভিতর মাঝেমাঝে
কথা চলতে থাকে।
একসময় দুজন দুজনার আরো ক্লোজ হয়ে
যায়।
নীলা আবিরকে ভালোভাবে চিনতে
পারে।
নীলার মনের ভিতর মাঝেমাঝে
আবীরের চিন্তা ঘুরপাক খায়।
আবীর সত্যিই অনেক ভালো ছেলে।
অনেক নম্রভদ্র
টাইপের।ছেলে হিসেবে আবীরের
তুলনাই হয়না।
.
.
একরাতে ১০ টার দিকে নীলার বাড়ি
থেকে ফোন আসলো।
-আপু,বাবার শরীরটা খুব খারাপ।তোকে
দেখতে চায়।তুই বাড়ি
আসবি কবে?
-এইতো আগামী সপ্তাহে বন্ধ দিবে।
তখন আসবো।
-না তুই কালই চলে আস প্লিজ।
এই বলে নীলার ভাই কাঁদতে শুরু করলো।
-আচ্ছা ভাই।কাঁদিস না। কালই আসবো।
.
নীলার গ্রামের বাড়ি অনেকটা দূরে।
২বছর আগে মাকে হারিয়েছে।ঘরে
আছে ওর থেকে
৩বছরের ছোটো এক ভাই আর ওর বাবা।
নীলার বাবা নীলাকে পড়ালেখাই
করাতেন না।বিয়ে দিতে
চেয়েছিলেন।
তবু নীলা অনেক বুঝিয়ে শেষমেষ
ভালো কলেজে ভর্তি
হতে পেরেছিলো।
এখন কিছু টিউশনি করিয়ে নীলা ওর
নিজের খরচ চালিয়ে নেয়।
কিন্তু ওর পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ।
তাছাড়া ওর ছোটভাই ফোন করে
বলেছে আগামীকাল বাড়িতে
যেতে।ওর বাবার শরীরের অবস্থা
নাকি ভালো নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে নীলার চোখের
কোনায় পানি আসে।
.
.
হঠাত নীলার ফোন ভাইব্রেট করলো।
হাতে নিয়ে দেখে
আবীরের কল।
-হ্যালো নীলা।
-হ্যা আবীর বলো।
-আগামীকালকে আমরা সবাই
গ্রুপওয়ার্ক করবো।তুমি ৯টার দিকে চলে
এসো, কেমন?
-সরি কাল আসতে পারবোনা।
বাড়িতে যেতে হবে।জরুরী তলব।
-ওহহ।
আচ্ছা তুমি এখন...
আবীর কি যেনো বলতে চাচ্ছিলো তখন
নীলা কল কেটে
দিলো।
.
একটু পর আবীর আবারো কল করলো।
-এই তুমি এমন কেনো হ্যা?কল কেটে
দিলে কেনো
এভাবে? (আবীর)
-সরি সরি।কিছু মনে করোনা প্লিজ।
মনটা একটু খারাপ।আর আমি
ভাবলাম তোমার কথা শেষ হয়েছে
তাই...। (নীলা)
-থাক আর বলতে হবেনা।
কি করছো এখন? (আবীর)
-শুয়ে আছি। (নীলা)
-ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখোতো?
-১২টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি।
-আচ্ছা এখন একটু বের হতে পারবে বাসা
থেকে?
-এতো রাতে!!!
কেনো?
-এমনি।তুমি নাকি চলে যাবে?তোমায়
একটু দেখবো।
-আজ হঠাত!তাও এতো রাতে!
আমি পারবোনা।সরি আবীর। (নীলা)
-প্লিজ প্লিজ,আজ আমার জীবনের
একটা স্পেশাল দিন।তুমি
আমার একটা বিশেষ বন্ধু।তোমার
থেকে উইশ না পেলে আমার
দিনটাই মাটি হয়ে যাবে। (আবীর)
-ওই আজ কি তোমার জন্মদিন নাকি?
(নীলা)
-হ্যা।
-কি!আগে বললেনা কেনো হুম?আমি
এখনই আসার চেষ্টা করছি।
এই বলে নীলা কল কেটে দিলো।
--------------------------
একটু পর আবীর দেখলো নীলা আসছে।
চাঁদের আলোতে নীলাকে দেখতে
পুরো অপ্সরীর
মতো লাগছিলো।
আবির হা করে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে
ছিলো।
.
চাঁদের আলোতে মিষ্টি মেয়েটাকে
এতো মায়াবী
দেখাচ্ছে ভেবে আবীরের মনে হলো
ও বুঝি স্বপ্ন
দেখছে।নিজের হাতে একটি চিমটি
কাটলো আবীর।
-হ্যাপি বার্থডে আবীর। (নীলা)
-হ্যা!কিছু বলেছো? (আবীর)
-হুম।উইশ জানালাম। (নীলা)
-ওহ।থ্যাংকস।আমার আর আজ রাতে
হয়তো ঘুম আসবেনা।
(আবীর)
-কেনো কি হয়েছে? (নীলা)
-একটা চিমটি কাটো তো। (আবীর)
-ওই জন্মদিনে কি তোমার মাথায়
সমস্যা দিলো নাকি হুম? (নীলা)
-নাহ।আমার গিফট এনেছো? (আবীর
মজা করে বললো)
নীলা বুঝতে পারলো আবীর
ফাজলামো করে বলেছে।
তবুও ওর কাছে দেবার মতো কিছু নেই
তাই মন খারাপ হয়ে গেলো।
-আমার কাছে দেবার মতো তেমন কিছুই
নেই। (নীলা)
-কে বলেছে কিছু নেই হুম?তোমার
কানে একজোড়া দুল
তো আছে।সেটা দিলেই চলবে।
(আবীর)
-এটাতো কমদামী সাধারন দুল।আচ্ছা
দাড়াও আমি খুলে দিচ্ছি।
(আবীর)
আবীর নীলার দুল দুটো খুলে নিয়ে
পকেটে ভরলো।
-আমার জন্মদিনের সেরা উপহার এটা।
যেটা লাখটাকার গিফটের থেকে
দামী।
এবার আমার ট্রিট দেবার পালা।
.
আবীর ওর পকেট থেকে ছোটো একটা
প্যাকেটে
মোড়ানো বক্স বের করলো।এরপর বললো-
-তোমার থেকে কোনো কিছু নিয়ে
তোমাকে পুরো নিঃস্ব
করে দিবোনা আমি কখনো।কোনো
অধিকার ছাড়াই তোমার থেকে
দুলজোড়া চেয়ে নিলাম।আর তুমি
কোনো প্রশ্ন ছাড়াই দিয়ে দিলে
আমাকে।এবার আমি তোমাকে আমার
সাধ্যের ভিতরে কিছু দিতে চাই।
নিবে কি?অন্তত ভালো বন্ধু হিসেবে।
.
নীলা আবিরের কথা শুনে থতমত
খেলো।
একবারের মতো আবীরের চোখের
দিকে তাকালো অবাক দৃষ্টিতে।
নীলা দেখতে পেলো আবীরের সেই
চোখে অজানা এক সুন্দর জগত ওর জন্য
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আবীরের চোখের এই জগতটি নীলা
আগে কখনো
খেয়াল করে দেখেনি।
.
নীলা চোখ নামিয়ে নিলো
আবীরের দিক থেকে।
-আচ্ছা।দাও (নীলা)
আবীর ওর হাতে থাকা প্যাকেটটি
নীলাকে দিলো।
-অনেকদিন দেখা হবেনা।অনেক মিস
করবো তোমাকে।মানে আমাদের
এতোদিনের কাটানো সময়গুলোকে।
-হুম।সেইম টু ইউ।আচ্ছা এখন আসি তবে।
তোমায় কিছু দিতে
পারলাম না। (নীলা)
-পাগলী আমি আমার সেরা গিফট
পেয়ে গিয়েছি।
-আচ্ছা।এখন যাচ্ছি। ভালো থেকো।গুড
নাইট।
এই বলে নীলা সেখান থেকে চলে
যাচ্ছিলো।
-নীলা।
-হ্যা।
-তুমি সত্যি দেখতে অনেক
মায়াবিনী।তোমার মনটাও অনেক
সুন্দর।
নীলা শেষবারের মতো আবীরকে
বিনিময়ে ছোট্ট একটা
হাসি দিয়ে চলে গেলো।
----------------
রুমে গিয়ে নীলা প্যাকেট খুলে
একজোড়া ডায়মন্ডের
কানের দুল, তাজা গোলাপ আর একটা
ছোট্ট চিঠি পেলো।
চিঠিতে লেখা ছিলো-
"নীলা জানিনা আমি মনের কথাটা
কিভাবে প্রকাশ করবো তোমার
কাছে।তুমি কি জানো তোমার
হাসিটা কতো সুন্দর?
আমি প্রায়ই সেটা আড়চোখে
তাকিয়ে দেখি মুগ্ধ নয়নে।
আর তোমার মায়াবী চোখ দুটিতে
আমার পৃথিবী দেখতে পাই।
হয়তো আমি তোমাকে তেমন কিছুই
দিতে পারবোনা।কিন্তু একটা সুন্দর
ভালোবাসার পৃথিবী তোমার জন্য
অপেক্ষা করবে সারাজীবন।
তুমি আমার ভালোবাসার জগতের
রানী হবে কি?
উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।"
নীলা আবীরের চিঠিটা পড়ে
কাঁদতে লাগলো কোনো এক অজানা
কষ্টে।
.
.
পরদিন নীলা ওদের গ্রামের বাড়িতে
চলে গেলো।
সেখানে গিয়ে শুনলো ওর বাবা ওর
বিয়ে ঠিক করেছে।
-বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।
(নীলা)
-দেখ মা,আমি মরে গেলে কে দেখবে
তোকে বল?
(নীলার বাবা)
-হ্যা আপু।তুই বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
ছেলেটা ভালো।আর বাবা
তোকে কতকালই বা দেখবে।একটু ভেবে
দেখ।
(নীলার ভাই)
রাতে নীলা অনেক কাদলো।আবীর
সত্যিই নীলাকে
অনেক ভালোবাসে।কিন্তু নীলাকে
ততোদিনে নিজের
মুখে ভালোবাসার কথাটি বলতে
পারেনি।আর নীলার তো এখন
আবীরকে মনের কথাটি জানানোর
উপায়টিও নেই।
২দিন পর নীলার সম্মতিতেই ওর বিয়ে
হয়ে গেলো অচেনা এক মানুষের
সাথে।বিয়ের পর আর লেখাপড়া
করবেনা নীলা।নীলা বিসর্জন দিলো
মনের সব আকাঙ্ক্ষা ও মনের মাঝে
লুকিয়ে রাখা ভালোবাসা।
.
এদিকে আবীর নীলার কানের
দুলজোড়া সবসময় দেখে আর নীলাকে
ভাবে।আবীরের মনটি এখনো অধীর
আগ্রহে অপেক্ষা করছে নীলার জন্য।
নীলাকে মনের কথাটি সরাসরি
জানাবে সেই প্রত্যাশায়।
অপ্রকাশিত থেকে গেলো দুটি মনের
ভালোবাসা।
-------------------------**************------
--------------------

No comments:

Post a Comment