Saturday, 17 September 2016

বন্ধুত্ব অতঃপর ভালবাসা

তোমার ঘর এত অগোছালো রাখো
কেন??
কথাটা শুনে চমকে উঠলো আরাফ। সে
মনোযোগ
দিয়ে তার অতিপ্রিয় ডাইরি লিখছিল
হুট করে
রাফা ঘরে ঢুকে গেলে একটু অপ্রস্তুত
হয়ে দ্রুত
ডাইরিটা পিছনে লুকিয়ে নিল।

.
-- তুমি কখন এলে?? (আরাফ)
-- যখন লেখক কি জানি লিখছিল।
(রাফা)
-- আরে না মানে ইয়ে এমনি।
-- হুম হয়েছে আর মাথা ঝাকাতে হবে
না।
-- (একটা মুচকি হাসি দিলো)
-- এখন বল ঘর এত অগোছালো রাখো
কেন??
-- কই অগোছালো??
-- চার চোখ লাগিয়েও দেখো না
নাকি??
.
দেখি সরো আমি ঘরটা ঘুছিয়ে দেই।
-- আরে না লাগবে না আমি পরে করে
নিব।
-- উফফ চাপো তো।
এই বলেই ঘর গোছাতে লাগল
পাগলীটা।
.
রাফা আমাদের পাশের বাসাতেই
থাকে একি
ভার্সিটিতে একি ক্লাসে পড়ি।
দুজনেই খুব ভাল
বন্ধু বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ডস। আমি
আমার
কিছু লুকাই না ওর কাছে সেও লুকায়
না। আমি কিছু
না লুকালেও শুধু একটা জিনিস লুকিয়ে
রেখেছি।
পরিচয় হবার দিন থেকে। ভালবাসি
তাকে প্রথম
দেখাতেই তবে বলতে ভয় হয়। আর আমি
এমনিও
মেয়েদের সাথে সেরকম ফ্রী মাইন্ডে
কথা বলি
না। তারপর তো বন্ধুত্ব ভাঙার ভয়টা
আছেই। সব
কিছু মিলিয়ে আমি এখনো রাফার শুধু
বন্ধুই রয়ে
গেলাম।
.
-- এই তুমি কই ভার্সিটিতে আসো নাই
নাকি??
(রাফা)
-- আরে না আমি রেডি হয়ে বের হয়ে
গেছি এইত
দশ মিনিটের মধেয়্য চলে আসছি।
(আরাফ)
-- হুম তাড়াতাড়ি আসো তোমার
সাথে জরুরি কথা
আছে।
-- কি কথা??
-- সামনাসামনিই বলব নি।
-- আচ্ছা।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম কিন্তু
হৃদস্পন্দন দ্রুত
হবার শব্দটা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম।
কি এমন
জরুরি কথা আছে। ভাবতে ভাবতে
ভার্সিটি
গেইটে এসে ভাড়া মিটিয়ে
ক্যাম্পাস চলে এল
সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল রাফা।
-- কি ব্যাপার এত জরুরি তলব??
-- হুম একজনের সাথে দেখা করাবো
তোমাকে।
-- তাই?? তা কে সে??
.
হাতের ডান সাইডে কাকে যেন
ইশারা করল রাফা।
একটা ছেলে আমাদের দিকে এগিয়ে
আসছে।
-- আরাফ ও আমার বয়ফ্রেন্ড আলভি।
অনেক দিন
ধরেই তোমার সাথে দেখা করানোর
কথা
ভাবছিলাম। তো আজ করিয়েই দিলাম।
নিজের কানের ওপর বিশ্বাস হচ্ছিল
না। বুকের বাম
পাশটায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব
করছিলাম। গলায়
যেন কি আটকে আছে এরকম মনে হচ্ছে।
কি বলছে
এসব রাফা। যাকে প্রতিটা মূহুর্ত
অজানা ছায়ায়
আগলে রেখেছি। লুকিয়ে লুকিয়ে
তার ভাল লাগা
পছন্দ-অপছন্দ সুবিধা-অসুবিধার কথা
ভেবেছি সে
কি না অন্য কারো।
-- এই আরাফ!!!
রাফার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। কথা
বলতে কষ্ট
হচ্ছিল খুব তবুও অনেক কষ্টে বলল
-- খুব সুন্দর মানিয়েছে তোমাদের
দুজনকে।
তোমাদের জুটি যেন এরকম অটুট থাকে।
-- থ্যাংকস ভাইয়া।
পাশে রাফার বয়ফ্রেন্ড হ্যান্ড শ্যাক
করার জন্য
হাত বাড়িয়ে আছে।
-- ভাল থাকবেন ভাইয়া।
বলেই চলে আসলাম আর এক মিনিট
থাকলেই
আমার চোখের শ্রাবণ বৃষ্টি দেখে
ফেলত।
.
ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় এসে
দরজা
লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু আগে যা
দেখেছি তা
কি সত্যি ছিল। কাঁদছি আমি অঝোর
ধারায়।
নিজেকে নিজে শান্তনা দেবার মত
কিছু নেই।
মাথা ঘুরাচ্ছে মাতালের মাতলামির
মতই।
.
সেদিনের পর বেশ ক'দিন ঢাকার
বাহিরে ছিলাম।
এই পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে
রাখতে চেয়েছি।
কারো ছায়া থেকে নিজেকে মুক্ত
রেখেছি। তবুও
মনে একটা দাগ রয়েই গেছে। আজ অনেক
দিন পর
ভার্সিটি আসলাম তিন মাস তো হবেই।
গেইটে পা
রাখতেই গা শিউরে উঠল। জীবনের
সবচেয়ে
অকল্পনীয় কথাটা এখানেই
শুনেছিলাম। ক্লাসে
গিয়ে একদম কর্নারের সিটে বসলাম।
অনেকেই
জানতে চাইছিল কইছিলাম এতদিন
উত্তরে একটা
মলিন হাসি ছাড়া কিছুই বলতে পারি
না।
.
চুপচাপ ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে
গিয়ে বসে
রইলাম। হঠাৎ করেই কাধে কারো
হাতের স্পর্শ
অনুভূত হল। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি
রাফা।
__ কই ছিলে এতদিন??(রাফা)
এই বলে পাশে এসে বসল।
__ নিজেকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে
দাবি করতে।
কিন্তু যখন তোমার প্রয়োজন সবচেয়ে
বেশি
অনুভূত হয়েছিল তখনই পালিয়ে গেল।
কথাগুলো রাফা অন্য পাশে ফিরে এক
নাগারে
বলে ফেলল।
__ কেন?? তোমার বয়ফ্রেন্ড কে রেখে
গিয়েছিলাম না তোমাকে দেখে
রাখতে।
ওর মুখে বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট দেখতে
পাচ্ছিলাম।
এটা লুকাতেই হয়ত অন্য দিকে ফিরে
আছে কিন্তু
সেটা আমার চোখের আড়াল হয় নি
মোটেও।
__ রাফা!! ওদিকে ফিরে আছো যে। এই
পাগলী
এদিকে তাকাও।
ওই তুমি কাদছো কেন?? কি হয়েছে?
__ আলভি এতদিন আমার সাথে মিথ্যা
ভালবাসা
দেখিয়েছে। ও আমায় ভালবাসে না।
শুধু অভিনয়
করেছে ভালবাসার। আরো অনেক
মেয়ের সাথেই
প্রতারণা করেছে। কিন্তু আমি ওকে
সত্যি
ভালবেসেছিলাম আরাফ।(কান্না
মিশ্রিত কন্ঠে
বলল রাফা)
__ তুমি কেদো না রাফা। যা হওয়ার
হয়েছে। তুমি
ঠিক সময়ে সত্যি টা জানতে
পেরেছো এই বা কম
কি।
রাফার কান্না অনেক কষ্টে থামিয়ে
সেদিন আর
ক্লাস করা হয় নি। ওকে নিয়ে বাসায়
চলে আসি।
.
রাতটা অনেক খারাপ ভাবে
কেটেছে। ওর কান্না
মাখা মুখটা বারবার চোখের সামনে
ভাসছিল।
অনেক রোগা হয়ে গেছে এ কয়দিনে।
নিজেকে
অপরাধী মনে হচ্ছিল। অনেক বদলে
গেছে।সত্যি
তো কিসের বন্ধু আমি ওর সবচেয়ে
কষ্টের মুহূর্তেই
দূরে ছিলাম। ওকে আর কাদতে হবে না।
আবার
আগের মত হাসি-খুশি রাফাকে
ফিরিয়ে আনব।
.
রাত ১২:০০ টা
__ হ্যালো রাফা!!!
__ আরাফ!! এত রাতে ফোন দিলে কেন??
__ তুমি কাল কলেজ যাবে??
__ একথা জিজ্ঞেস করার জন্য ঘুম
ভাঙালে??
__ সরি। এখন বল না আসবে কাল??
__ হুম।
__ আচ্ছা একসাথে যাব। বাই ঘুমাও।
__ বাই।
.
পরেরদিন একটু সকাল সকাল উঠে রেডি
হয়ে রাফা
কে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা
হলাম।
__আজ কি কলেজে বিশেষ কিছু??
__না তো।
__ এই কলেজের রাস্তা তো এই দিকে
তুমি কই
যাও??
__ হাসানের বাসায়।
__ কেন??
__ চলই না নিজেই বুঝতে পারবে।
হাসানের বাসার সামনে এসে
কলিংবেল টিপ
দিতেই দরজা খুলে দিল।
__ কিরে এতক্ষণ লাগল আসতে??(হাসান)
__ রাস্তায় জ্যাম প্রচুর।
__ হুম আয় এখন।
__ ওয়েট রাফা!!! তোমাকে ব্লাইন্ড
ফোল্ড করতে
হবে।
এই বলে রাফার চোখে একটা কালো
কাপড় বেধে
দিলাম।
__ আরে হচ্ছে কি এসব??(রাফা)
রাফাকে ভিতরে নিয়ে গেলাম। আজ
ওর বার্থডে
পাগলীটা ভুলেই গেছে। তাই আমি আর
হাসান
মিলেওর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান
করেছি।
কলেজের সব ফ্রেন্ড রা উপস্থিত আছে।
রুমে নিয়ে চোখ খুলে দিতেই সবাই
একসাথে বলে
উঠল
"হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রাফা"
__ আরাফ!!!!(রাফা)
__ সারপ্রাইজ(আরাফ)
রাফা কে অনেক খুশি লাগছিল।
কিছুক্ষনের জন্য
হলেও পুরনো রাফা ফিরে এসেছিল।
.
সেদিনের পর থেকে প্রায়ই ওকে ঘুরতে
নিয়ে
যেতাম। যখন তখন ফোন দিয়ে বিরক্ত
করতাম।
যাতে রাফা কোন ভাবেই নিজেকে
একা মনে না
করে।
__ওই ওঠো!!! কি ঘুম রে বাবা। (রাফা)
__ মা যাও আরেকটু ঘুমাতে দাও। (আরাফ
ঘুমের
মধ্যে)
__ এই বদমাইশ আমি মা না রাফা!!!
__ রাফা!!! তুমি এখানে??
__ কয়টা কল দিয়েছি দেখ তো একটু। এত
ঘুম
কাতুরে হলে কবে??
___ ওরে বাবা!! ১৩টা মিস কল??
__ ওই মিস কল কি কল -ই দিছি। এখন
তাড়াতাড়ি
উঠো এমনি কত লেট হইছে।
__ আগে তুমি ওই সাইডে ফিরো।
__ কেন?? কি ফাজলামি শুরু করলে??
__ বুঝবা না লুঙি ফ্যাক্ট। এখন ফিরো
না একটু।
__ ওকে তাড়াতাড়ি প্লিজ।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে
মহারানী কে নিয়ে
কলেজ চলে এলাম।
.
ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে বসে আছি।
এমন সময়
হাসান একটা নোট দিতে বলল আর
সেটা ছিল
ব্যাগে। আমি ক্লাসে গিয়ে নোট
নিতে গিয়ে
দেখলাম সব আছে বাট আমার ব্যাগে
আমার সেই
ডাইরি টাও ছিল আমি সবসময় ওটা
আমার কাছেই
রাখি কিন্তু এখন নেই। আমি খুঁজছিলাম
এমন সময়
রাফা পিছনে এসে দাঁড়াল
__ কি খুজছো??
__ ডাইরি।
__ এটাই তো??
হাতে ডাইরিটা দেখিয়ে। আমি খপ
করে হাত
থেকে ডাইরি টা নিয়ে নিলাম।
__ তুমি পড়েছ?? (আমি)
__ হ্যা।(রাফা)
__ রাগ করেছো??
__ লিখা গুলো সত্যি??
__ ডাইরি টাকে আমি আমার নিজের
একটা অংশ
ভাবি। আর নিজেই নিজেকে মিথ্যে
বলার মানে
হয় না।
__ তার মানে ভালবাসো??
__ অনেক বেশি।
__ বল নি কেন??
__ ভয় লাগত যদি রাগ করে আর কথা না
বল।
__ এখন ভয় লাগছে না??
__ সত্যি টা যখন সামনেই চলে আসছে
আর ভয়
পেয়ে লাভ নেই। রাফা অনেক বেশি
ভালবাসি।
হয়তো বা ভালবাসা থেকে তোমার
বিশ্বাস উঠে
গেছে। কিন্তু আরেকটা বার ভুল কর শেষ
বারের
মত বিশ্বাস করে দেখ। কখনো কাঁদতে
দিব না।
__ আমাকে একটু সময় দাও আরাফ।
.
এই বলেই চলে গেল। সেদিনের পর ২দিন
হয়ে গেছে
রাফার সাথে কথাও হয় নাই। কিন্তু
এভাবে আর
না। একবার হারিয়ে ফেলার পরও
আবার পেয়েছি
এবার আর হারাতে দিচ্ছি না।
মাকে সব বললাম আর রাফা মেয়ে
হিসেবে খুবই
ভাল। আমাদের ফ্যামিলির সবাই ওদের
ফ্যামিলির
সাথে খুব ভাল সম্পর্ক। তাই মা আর না
করে নি।
.
__ রাফা রেডি হয়ে নে।(রাফার মা)
__ কেন মা??(রাফা)
__ তোকে দেখতে আসছে।
__ মানে কি?? আমাকে আগে বলার
প্রয়োজনও
মনে কর নি।
__ আমি না তোর বাবা সব জানে। এখন
কথা না
বলে রেডি হয়ে নে। ছেলেদের চলে
আসার সময়
হয়ে গেছে।
রাফা আর কিচ্ছু বলতে পারল না। কিন্তু
ও তো
আরাফ কে ভালবাসে। অন্য কাউকে
নিয়ে সারাটা
জীবন কিভাবে কাটাবে। নিজের
মনের সাথে
লড়াই করেও বাবার ইচ্ছায় রেডি হয়ে
নিল রাফা।
মা এসে নিয়ে গেল বাইরে ছেলেরা
অপেক্ষা
করছে।
.
একটা প্লেট হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমে
আসল। চোখ
তুলে একবার দেখতে গেল। দেখেই
রাফার চোখ
ছানাবড়া এতো আরাফ। রাফার খুশির
বাধ ভেঙে
গেছে। মনে মনে অনেক হ্যাপি। আর
ওদিকে আরাফ
মুচকি মুচকি হাসছে। আজ রাফার ইচ্ছে
করছে
আরাফকে জড়িয়ে ধরে বলতে
ভালবাসি।

No comments:

Post a Comment