Saturday, 17 September 2016

যেদিন লাবণী কেঁদেছিল

একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায়
করে , লাল জামা পড়ে । প্রতিদিনই
অরণ্য দারিয়ে থাকে লাবনীকে এক
ঝলক দেখার আশায় । তবে ভাব করে
যেন কোথাও যাচ্ছে । এই নিয়ে ৭ম বার
হল , মুখ ফুটে "কোথায় যাও" ছাড়া আর
কিছু বলতে পারলনা । অনেক কিছু বলার
ছিল লাবনীকে , এক ঝলক দেখলে অরণ্য
মন কেমন অশান্ত হয়ে উঠে ।
অশান্তিকে তো খারাপ লাগার কথা ।
কিন্তু এই অশান্তিকে অরণ্যর ভালই
লাগে । কেমন যেন একটা মধুর জ্বালাতন
থাকে সারাটাদিন । হয়ত একেই
ভালবাসা বলে।
আজ পহেলা বৈশাখ , ১৪ই এপ্রিল ।
হিসাবমতে আজ বাংলা নববর্ষ । কিন্তু
এই দিনকে আজকাল কেন জানি অরণ্যর
কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা এর মত মনে
হয় । মা - বাবার চোখ ফাকি দিয়ে
মেয়েরা লাল শাড়ি পড়ে আর
ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে রিকশায়
করে ঘুরাঘুরি করে । এই দিনে আপনি
রিক্সার দিকে তাকান , দেখবেন ৪টা
রিক্সার মধ্যে ৩টাতেই একজন তরুন এবং
একজন তরুনি হাত ধরে একজন আরেকজনের
দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
দুইজনের চোখ দিয়েই অনেক কথা বলা
হয়ে যায় । সব প্রেম প্রকাশ হয়ে যায়
চোখের পাতায় বেড়িয়ে আসার
আপ্রান চেষ্টায় থাকা দু ফুটা চোখের
জল । এই প্রমের দৃশ্যগুলা দেখতেও একটা
অন্যরকম আনন্দ আছে । কেও মনে হয় সত্যি
ই বলেছেন " প্রেম স্বর্গ থেকে আসে " ।
অরন্য তাই এই দুই নম্বর ভালবাসা
দিবসকেই ভালবাসা নিবেদনের জন্য
পছন্দ করে নিলো । সে হ্যা করুক আর নাই
করুক । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ ছুড়ে
মারুক মুখের উপর , বাম হাত দিয়ে সবার
সামনে চড় মারুক তবুও শুধু লাবনীকে
জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে একজন
আছে যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত
লাবনীকে ভালবাসবে । বুকের
গভিরোতম অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হবে শুধু
তার ভালবাসার জন্য ।
লাবনীকে অরন্য হয়তো কখনও ভালবাসি
বলত নাহ । ওর ভয় যদি লাবণী ওকে ভুল
বুঝে ? ও যদি বলতে না পারে যে ও
লাবনীকে কি রকম ভাবে ভালবাসে
তাহলে তো ওর প্রেম বৃথা যাবে ।
হয়তো লাবণী বুঝবেনা অরন্যের এই
হৃদয়ের প্রতিটি হৃদস্পন্দন কেমন করে
ভালবাসি ভালবাসি করে হাহাকার
করে । কিন্তু সেদিন আমি ওকে বললাম
যে এইরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন
ভালবাসবি ? এই রকম "কেহ দেখিবে না
মোর গভির প্রণয় , কেহ জানিবে না
মোর অশ্রুবারিচয় " আর কত করবি ? গিয়ে
বলে দে না গাধা । এত ভয় কিসের ?
অরন্যঃ "কিন্তু তানিয়া , ও যদি না
করে তাহলে ?"
আমি বললাম (তানিয়া) "না করলে
করবে । কিন্তু মনের কথা এর জন্য গোপন
রাখবি?"
অরন্যঃ "তর কথাও ঠিক । বলতে হবে
আমাকে । আমার প্রেম সত্যি হলে অবশ্যই
হ্যা করবে । "
এই হল অরন্যর প্রেম নিবেদনের সাহসের
জোগান । জোগানদাতা হলাম আমি ,
তানিয়া ।
" আমি তোমাকে ভালবাসি" , পৃথিবীর
মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলা কথা ।
সবচেয়ে কঠিন কথাও মনে হয়। এবং
অবশ্যই সবচেয়ে সুন্দর কথা । যতই ভালবাস
না কেন , ভালবাসি বলা ততটাই কঠিন
। যত বেশি ভালবাস, তত বেশি
হারানোর ভয় । আজকের জন্য অরন্যর সব ভয়
দূরে থাক । আজকে অরন্যকে বলতেই হবে ,
হয়তো কাল কখনো আসবেনা ।
লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । পুকুরের স্বচ্ছ
পানিতে নৌকায় পা দুটো দুলিয়ে
খিলখিলিয়ে হাসছে । কতো সুন্দর
হাসি । শুধু এই হাসিটা সারাজিবন
দেখার জন্য অরন্য নিজের জীবন দিয়ে
দিতে পারবে । এই হাসির জন্য অরণ্যর
জীবন দিতেও কনো আফসোস নেই । অরণ্য
পাঞ্জাবির পকেট থেকে লাল
গোলাপটা বের করল । লাবণী এখন
নৌকা থেকে নামল । অরন্যকে এখন সেই
তিনটা শব্দ বলা লাগবে । লাবণী
নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে
এগিয়ে আসছে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর
দিয়ে । গোলাপ হাতে নিয়ে অরণ্যও
আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে লাবনীর
দিকে । ধুপপপপ !!! কাহিনিতে নতুন
চরিত্রের প্রবেশ ! রোহিত ।
লাবণী অরণ্যর কাছাকাছি আসার
আগেই রোহিতের হাত ধরে চলে
গেলো । হয়তো একেবারেই চলে
গেলো । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ
নিচে পড়ে গেলো । শরীর ভরশুন্য হয়ে
গেলো । গোলাপটা তুলতে চাইল অরণ্য ।
আর যাই হোক প্রথম প্রেমের প্রথম
গোলাপ তো । লাবণীকে ভালবাসার
স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে । হয়তো এই
গোলাপ নিয়েই সারাজীবন বেঁচে
থাকতে হবে , সারাজীবন ।
তিন দিন পরঃ
তো কি হয়েছে লাবণী অন্য কাওকে
ভালবাসে ? অরণ্যও বাসে । সবচেয়ে
বেশি বাসে । লাবণী অন্য কাউকে
ভালবাসে তারমানে এই না যে
অরন্যকে ভুলে যেতে হবে । অরন্যর
ভালবাসা অরন্য অবশ্যই প্রকাশ করবে ।
লাবণী হ্যা করুক আর নাই করুক , শুধু
জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে অরন্যর
শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অরন্য লাবনীকে
ভালবাসবে । প্রেম নিবেদনের জন্য
সেই সাহস এখন আর অরন্যর মনে নেই । তাই
এক বোতল ভোদকা গলাধঃকরণ করলো ।
অরন্য এখন লাবনির দুইতালা বাসার
বারান্দার গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে
আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মাথার
চুল উশকোখুশকো হয়ে আছে । হাত এবং
শরীর ক্রমাগতভাবে কাপছে ।
যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে
দুইতালা থেকে নিচে । আগে থেকে
কুড়িয়ে আনা ঢিল লাবনীর কাছের
আলমারিতে মারলো । সরাসরি
লাবনীর গায়ে মারতে পারতো কিন্তু
লাবনীকে আঘাত করা অরন্যর পক্ষে
সম্ভব না । লাবণী ঘুম থেকে উঠলো ।
তারপর চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ
সামলিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দায়
চলে আসল ।
লাবনিঃ এত রাতে বারান্দায়
ঝুলতেছ কেন ? সমস্যা কি ?
অরন্যঃ সমস্যা একটাই । তোমার কথা
কখনই ভুলতে পারি না ।তোমার প্রেমে
পড়ে গেছি । যেখানেই তাকাই শুধু
তুমি আর তুমি । যেখানেই যাই শুধু
তোমার হাত খুঁজি ধরার জন্য । পড়তে
বসলে তোমার কথা মনে পরে । আর যখন
সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে যাই তখন
তুমি স্বপ্নে এসেও হানা দাও । এসে
সেই ভুবন ভুলানো হাসি দাও আমার
দিকে তাকিয়ে , আমি তো তখনই
প্রেমে পড়ে যাই ।
লাবণীঃ অরন্য তুমি জানো রোহিতের
সাথে আমার রিলেশন আছে । তাহলে
এই পাগলামির মানে কি ?
অরন্যঃ কারন আমি তোমাকে
ভালবাসি । ওই রোহিত থেকে অনেক
বেশি ভালবাসি । সবার থেকে বেশি
। তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে
পড়ে যাই । তুমিই প্রথম প্রেম , তুমিই শেষ

লাবনিঃ প্রথম প্রেম বলতে কিছু নেই ।
প্রেম বারবার হতে পারে ।
অরন্যঃ তাও ঠিক । আমার জীবনে প্রেম
একটাই । কিন্তু ফিরে আসে বারবার ।
যতবার তোমাকে ভুলে যেতে চাই ,
ততবার আরো বেশি করে প্রেমে পড়ি ।
লাবনিঃ অরণ্য , তুমি আমার ভাল বন্ধু ।
তোমার ভালর জন্যই বলছি । আমাকে
ভালবেসে কোন লাভ হবে নাহ । শুধু
কষ্টই পাবে । তাই ভাল হয় যদি ভুলে
যেতে পারো ।
অরন্যঃ দি লাভ ক্ষতি হিসাব করে
প্রেমে পড়তাম তাহলে তো আর
তোমাকে ভালবাসতাম না । তোমার
ওই চোখ দুটা , ওই হাসিটা আমাকে
প্রেমে ফেলে দিয়েছে । এই প্রেম
থেকে আমি কি পাব তা কখনো
চিন্তা করি নি । চিন্তা করতে চাইও
না । আমি শুধু জানি যে লাবণী
নামের একটা মেয়েকে আমার
জীবনের সব প্রেম , ভালবাসা দিয়ে
দিয়েছি । পারলে আমার এই জীবনটাও
দিয়ে দিতাম । একবার এই প্রান চেয়ে
দেখো , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে
তোমার হাতে এই প্রান তুলে দিব ।
লাবনিঃ বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দাও
। সকালে উঠে দেখবে সব পাগলামি
চলে গেছে । এই এইজে প্রেম হয় না ,
এটা শুধু কিছুদিনের ইমোসন । কয়েকদিন
পরে চলে যাবে ।
অরন্যঃ ( লাফ দিয়ে নিচে নেমে ,
চিৎকার করতে করতে ) লাবণী , শুধু
জানাতে এসেছিলাম আমার মনের
কথা । শুধু জানাতে এসেছিলাম যে এই
পৃথিবীতে কেউ একজন তার শেষ
নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালবাসবে ।
তুমি চাও না চাও আমি তোমাকে
ভালবাসব । এর কারন এই না যে অন্য
কোন মেয়ে পাই না । এর কারন এই যে
তুমি আমার প্রথম প্রেম , এবং শেষ । মরার
আগ মুহূর্তেও বলব "লাবণী আমি
তোমাকে ভালবাসি" , আই প্রমিস ।
লাবনিঃ টাটা।
অরন্যঃ নেভার স্যা নেভার লাবণী ।
এই জীবন অনেক বড় । একবার না একবার
তো দেখা হয়েই যাবে ।
তিন বছর পরঃ
আমরা পিকনিকে যাচ্ছি । কক্সবাজার
থেকে এখন সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । ৩০
জন ছাত্রছাত্রী এবং ২০ জন শিক্ষক ।
সাথে আমি, অরণ্য , রোহিত এবং
লাবণী । হ্যা , লাবনীকে অরণ্য এখনো
ভালবাসে । এখনো লাবনীর
রোহিতের সাথে সম্পর্ক আছে । কিন্তু
এখন আরো অনেক বেশি ভালবাসে ।
এখনও এক মুহূর্তের জন্য লাবণী অরণ্যর মন
থেকে যায় না । ও অরন্যকে ভালবাসুক
না বাসুক অরণ্যর ভালবাসা দিন দিন
বেড়েই যাচ্ছে ।
রোহিত আর লাবনীকে দেখা যাচ্ছে ।
লঞ্চের ছাদের উপর । ওরা
টাইটানিকের পোজ দিতে চাইছে ।
অরন্য আমাকে বলল " গাধায় এটাও
জানে না যে টাইটানিকের পোজে
ছেলেকে পিছনে দাড়াতে হয় " ।
আরে ওরা কোথায় যাচ্ছে ?
একেবারে লঞ্চের উপরের ছাদে চলে
গেলো ওরা । কেউ নেই ওইখানে ।
জায়গাটা একটু বিপদজনক ।
লাবনীর হাত ধরে রোহিত একবার ওকে
ঘুরাল । ওরা নাচছে । আস্তে আস্তে
নাচার গতি বাড়তে থাকল । রোহিত
লাবনীর হাত ধরে ঘুরিয়ে বামদিকে
নিলো তারপর অন্যহাত দিয়ে আবার
সামনে আনলো । তারপর একহাত দিয়ে
দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে
আনলো । কাছে এনে লাবনীকে
কোলে নিতে চাইলো । রোহিত
ভারসাম্য রাখতে পারলনা । রোহিত
ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে গেলো ।
তারপর রোহিত ঘুরে গেলো । ওর সামন
চলে গেলো রেলিঙের দিকে ।
লাবণী এখনও রোহিতের কোলে ।
রেলিঙে রোহিতের হাত ঝারি
খেলো । রোহিত হাতে ব্যাথা পেয়ে
লাবনীকে হাত থেকে ছেড়ে দিলো ।
নাহ !!! লাবণী সোজা তিনতলা থেকে
একেবারে নিচে পানিতে পড়ে
গেলো । "রোহিত" , রোহিত" , বলে
চিৎকার করতে থাকল । রোহিত নিচে
নেমে গেলো । ৩০ জন ছাত্র ছাত্রি
এবং ২০ জন শিক্ষকের সবাই রেলিঙের
পাশে চলে এল । লাবণী শ্বাস নিতে
পারছেনা । একবার ডুবছে আবার
ভাসছে । এখনও লাবণী "রোহিত ,
রোহিত" বলে চিৎকার করছে । আর
রোহিত চিৎকার করছে "কেউ
লাবনীকে বাচাও , কেউ একজন বাচাও"
। তারপর আরেকটা ঝাপের শব্দ শুনলাম ।
দুইতলা থেকে কেউ একজন ঝাপ
দিয়েছে । হয়তো রোহিতের চিৎকার
শুনেই লাফ দিয়েছে । নাহ , যে লাফ
দিয়েছে সে রোহিতের চিৎকার শুনে
লাফ দেয় নি । সে লাফ দিয়েছে তার
ভালবাসার জন্য । অরন্য দুইতলা থেকে
লাফ দিয়েছে পানিতে । আর আমার
মাথায় শুধু একটা কথাই এল "অরণ্য
সাতারের কিছুই জানে না" ।
৭ দিন পরঃ
অরণ্য এখনো কোমায় আছে । ডাক্তার
বলেছেন ওর ফুসফুসে নাকি পানি
ঢুকেছে । পানি না বের করলে ওর শ্বাস
নিতে সমস্যা হবে । আবার কোমায়
থাকলে অপারেশনও করা যাবে না ।
যখন কোমা থেকে ফিরে আসবে ঠিক
তখনই অপারেশন করা লাগবে ।
লাবণী এই সাত দিন ধরে হাসপাতালে
বসে ছিল । আমি যখন খাবার নিয়ে ওর
কাছে আসলাম , ও আমাকে বলল , " আমি
একটু অরণ্যকে দেখতে পারব ? " । আমি
কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে
রইলাম । ওর চোখে যা দেখলাম তা
কখনও আগে ওর চোখে দেখিনি ।
রোহিতের সাথে থাকার সময় তো
কখনোই দেখি নি , দেখেছিলাম শুধুই
বিভ্রান্তি । আজকে দেখলাম অন্য কিছু
, পবিত্র ।
লাবণী অরণ্যের বেডের পাশে বসে
আছে । অরণ্য জীবন মৃত্যুর মধ্যে । আর
লাবণী নেই ওর নিজের মধ্যে । লাবণী
কথা বলা শুরু করল ।
অরণ্য , জানি না তুমি কোন সময় জেগে
উঠবে । যত দেরিই কর না কেন , আমি
তোমার অপেক্ষায় থাকব । তোমাকে
অনেক কিছু বলার আছে , অনেক কিছু
অরন্য । ৩ বছর আগে তুমি বারান্দায় ঝুলে
যে কথা গুলো বলেছিলে আর আমি
হেসেছিলাম সেই কথা গুলো আজকে
তোমাকে বলতে চাই । এই রকম অনুভূতি
আমার কখনও হয় নি । কি রকম একটা
ব্যাথা মনের ভিতর । কিছু একটা
হারানোর ভয় সারাক্ষন । আমি এই
ব্যাথা নিয়ে ২ দিনও থাকতে পারবনা
। তুমি ৩ বছর ধরে কিভাবে থাকলে ? এই
অরন্য , শুনছো ? শুধুমাত্র ভালবাসলেই এই
ব্যাথা সহ্য করা যায় । আমি কি করতে
পারব ?
অরন্য জেগে উঠল । আস্তে আস্তে বলল , "
লাবণী ভাল আছো ? "
লাবণী কেঁদে ফেলল । অশ্রু লোকানোর
কোনো চেষ্টা করলনা ।
অরন্যঃ আমি তো শুধু কেমন আছ
জিজ্ঞেস করলাম । এতে কাঁদার কি
হল ?
লাবনীঃ ( নিশ্চুপ ) ।
অরন্যঃ "লাবনী , আমি বলেছিলাম না
আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত
পর্যন্ত ভালবাসবো ? আমি আমার কথা
রেখেছি লাবণী । আমি এখনও
তোমাকে ভালবাসি । লাবণী
শেষবারের মত বলি , আমি তোমাকে
অনেক ভালবাসি । যাই লাবণী , ভাল
থেকো " , বলে অরণ্য লাবণীর গালে
আস্তে করে একটু হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল
। লাবণী গাল বাড়িয়ে দিলো । কিন্তু
অরণ্যর হাত লাবণীর গাল স্পর্শ করার
আগেই থেমে গেলো । অরণ্যকে মরে
গিয়ে প্রমাণ করতে হল যে সে ঠিকই
লাবণীকে ভালবাসে ।
তিন দিন পরঃ আমি লাবনীর বাসায়
গেলাম । লাবণী ওর রুমে দরজা
লাগিয়ে বসে আছে । আমি ঢুকলাম
রুমে । " লাবণী , অরন্য মারা যাবার পর
ওর বেডে এই ডায়রিটা ছিল । এর শেষ
পৃষ্ঠায় লেখা ছিল যে ডায়রিটা যেন
তোমাকে দেয়া হয় । তাই দিতে
আসলাম " , বলে আমি হাত বাড়ালাম ।
লাবণী আমার হাত থেকে ডায়রিটা
নিলো । প্রথম পাতা উল্টানোর পরেই
সেই লাল গোলাপটা দেখতে পেলো
যা হাতে নিয়ে অরন্য লাবনীকে
প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল ।
গোলাপ মজে গেছে কিন্তু গোলাপের
মধ্যে গন্ধ রয়ে গেছে । তিন বছর আগের
গোলাপ এখনো গন্ধ রয়ে গেছে !
লাবণী গোলাপটাকে নাকের কাছে
নিয়ে তীব্রভাবে গন্ধ নিতে চাইল ।
তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো । চোখ
যখন খুলল তখন দুই ফোটা অশ্রু লাবণীর গাল
বেয়ে ঝরে পড়ল । লাবণী পড়তে শুরু করল
। প্রথম লাইন এইভাবে শুরু হল " একটু আগে
লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল
জামা পড়ে ......... " । লাবনীর চোখ
বেয়ে আবারও পানি ঝরল । এবার আরো
বেশি পরিমাণে । লাবনী
ডায়রিটাকে বুকের কাছে নিয়ে শক্ত
করে ধরে কেঁদে উঠল । লাবণী কান্না
থামাতে চাইল না । আজ যত অশ্রু ঝরার
ঝরবে । আজ লাবনীর কাঁদার দিন ।
লাবণী আজ কাঁদবে ।

No comments:

Post a Comment